সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন
ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী, কালের খবর :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশকে বিপদের সময় মানুষের বন্ধু হতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
রবিবার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলেই আজকে আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে এবং এভাবেই চলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে সেবা পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ আমরা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা ৪৯ হাজার ২০০ পদ সৃষ্টি করেছি। পুলিশের ট্রেনিংয়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত পুলিশও তৈরি করছি।
শিল্পাঞ্চলের জন্য শিল্প পুলিশ, ট্যুরিষ্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, নৌ পুলিশ, গার্ড এবং প্রটেকশান পুলিশ গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের পদায়নের ক্ষেত্রে আমরা মান উচ্চ করেছি। রেশম ভাতা দিয়েছি। আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে ৯৯৯ এ ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছে। জনগণ সেবা পাচ্ছে। এই ধরণের কার্যক্রম আরও অব্যাহত থাকবে। আর পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন স্বচ্ছতার নজির সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, নবীন পুলিশ কর্মকর্তার কুচকাওয়াজে যারা অংশগ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তাদেরকে আমি এটাই বলবো বিপদে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবেন। যাতে করে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এমন কালো বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাতে পারি।
‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আজকে দেশ স্বল্পন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। সেজন্য দেশে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালের ৯ মে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ এই সারদায় অনুষ্ঠিত হয়। সেই কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। বঙ্গবন্ধু পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতেন- আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শাষকদের পুলিশ নন। জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আমি আশা করি আপনারা জাতির পিতার সেই প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের উপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে দশটায় একাডেমির হেলিপ্যাডে পৌঁছলে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও একাডেমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নাজিবর রহমান তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্যারেডে ১৭ জন নারী অফিসারসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
এবার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণে বেস্ট শ্যুটার হয়েছেন খায়রুল কবির। এছাড়া আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বেস্ট ফিল্ড পারফমার, মো. সালাহউদ্দিন বেস্ট হর্সম্যানশিপ, সাইফুল ইসলাম খান বেস্ট একাডেমিক এবং বেস্ট প্রবেশনার হয়েছেন মো. সালাহ্উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী একাডেমি চত্বরে একটি আম গাছের চারা রোপণ করেন। অংশ নেন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ফটোসেশনেও।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারসহ বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যসহ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।